কৃষিকাজ কাকে বলে ? কৃষিকাজের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর

 প্রশ্নঃ কৃষিকাজ কাকে বলে ?

উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী মানুষ যখন উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের স্বাভাবিক জন্ম ও বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে নিজেদের চাহিদা ও অভাব মেটানোর জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজাত দ্রব্য উৎপাদন করে, তখন সেই উৎপাদনশীল প্রচেষ্টাকে কৃষিকাজ বলে। 

        ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং সেখানকার মানুষের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন কিছু প্রণালীর সৃষ্টি হয়েছে।  

 প্রশ্নঃ জমির লভ্যতা ও জনসংখ্যার তারতম্য অনুসারে কৃষিকাজের শ্রেণীবিভাগ কর।

উত্তরঃ জমির সহজলভ্যতা ও জনসংখ্যার তারতম্য অনুসারে কৃষি কাজের শ্রেণীবিভাগ গুলি হল -

ক) ব্যাপক কৃষিঃ বিশ্বের যে সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব কম এবং কৃষি জমির পরিমাণ বেশি সেখানে প্রচুর মূলধন ন্যূনতম শ্রম ও কারিগরি কৌশলের সাহায্যে যে বৃহৎ আকারের কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় তাকে ব্যাপক কৃষি বলে।

উদাহরণঃ কানাডার গম চাষ ব্যাপক কৃষি ব্যবস্থার অন্তর্গত।

খ) নিবিড় বা প্রগাঢ় কৃষিঃ বিশ্বের যে সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব বেশি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দ্রুত, সস্তা শ্রমিক এবং কৃষি জমির পরিমাণ সীমিত, সেখানে জীবিকা নির্বাহ ও জীবন ধারণের জন্য গড়ে ওঠা শ্রম নিবিড় কৃষি ব্যবস্থাকে প্রগাঢ় কৃষি বা নিবীড় কৃষি বলে।

উদাহরণ - চীন, জাপান, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হয়।  

প্রশ্নঃ প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা পার্থক্যের ভিত্তিতে কৃষিকাজের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর।

উত্তরঃ প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পার্থক্যের ভিত্তিতে কৃষিকাজের শ্রেণীবিভাগ হল -

ক) আদিম জীবিকা স্বত্বা ভিত্তিক কৃষিঃ 

                মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সহায়তায় কেবলমাত্র স্থানীয় চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে যে কৃষি ব্যবস্থার সূচনা ঘটে তাকে আদিম জীবিকা সত্তাভিত্তিক কৃষি বলে।

উদাহরণ - জাভার ধান চাষ এই কৃষি ব্যবস্থার অন্তর্গত।

           এই স্বয়ংসম্পূর্ণ বা আদিম জীবিকা সত্তাভিত্তিক কৃষিকে আবার দুটি উপবিভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা- 

ক) স্থানান্তর কৃষিঃ যে প্রাচীনপন্থী কৃষি ব্যবস্থায় ক্রান্তীয় বনভূমিতে বসবাসকারী যাযাবর উপজাতি গোষ্ঠীর লোকেরা বন জঙ্গল কেটে ও পুড়িয়ে অত্যন্ত প্রাচীন ও অনুন্নত প্রথায় স্থান থেকে স্থানান্তরের গমনের মাধ্যমে কৃষিকাজ করে তাকে স্থানান্তর কৃষি বলে। 

খ) স্থায়ী কৃষিঃ যে প্রাচীনপন্থী কৃষি ব্যবস্থায় ক্রান্তীয় পাহাড়ি ও মালভূমি অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী আদিম কৃষিজীবী উপজাতি গোষ্ঠীর লোকেরা কেবলমাত্র জীবন ধারণের প্রয়োজনে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে প্রাচীন ও অনুন্নত প্রথায় বছরের পর বছর একই জমিতে কৃষিকাজ করে তাকে স্থায়ী কৃষি বলে।

২) বাণিজ্যিক কৃষিঃ আধুনিক কৃষি পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে যে বিজ্ঞানসম্মত কৃষিকাজ শস্য উৎপাদনকে ব্যবসায়িকভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছে সেই অধিক মূলধন নির্ভর প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বৃহৎ কৃষি ব্যবস্থাকে বাণিজ্যিক কৃষি বলে।

উদাহরণ - পশ্চিমবঙ্গের পাট চাষ এবং মহারাষ্ট্রের কার্পাস চাষ বাণিজ্যিক কৃষির উদাহরণ।

৩) বাগিচা কৃষিঃ যে রপ্তানি বাণিজ্য নির্ভর কৃষি ব্যবস্থায় কোন একটি বিশেষ শস্যকে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পরিকাঠামোগত সব রকম সুযোগ-সুবিধার মধ্যে বড় বড় বাগিচা নির্মাণ করে চাষ করা হয় ,সেই বৃহৎ আকারের লাভজনক এবং একক শস্য কেন্দ্রিক কৃষি ব্যবস্থাকে বাগীচা কৃষি বলে।

উদাহরণ - পশ্চিমবঙ্গ আসামের চা চাষ ,কর্নাটকের কফি চাষ ,শ্রীলঙ্কার নারকেল চাষ, মালয়েশিয়ার রবার চাষ ইত্যাদি হলো বাগিচা কৃষির উদাহরণ।

৪) মিশ্র কৃষিঃ যে আধুনিক ও উন্নত কৃষি ব্যবস্থায় অনুকূল প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে একই কৃষি খামারে খাদ্যশস্য, ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি কৃষিজ ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি দুধ, মাংস ও জৈব সারের চাহিদা মেটাতে পশুপালন করা হয়, সেই অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিবিহীন বাজার কেন্দ্রিক কৃষি ব্যবস্থাকে মিশ্র কৃষি বলে।

উদাহরণ - আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমভূমি অঞ্চলে এই ধরনের কৃষিকাজ করা হয়। 





Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)