রুশ বিপ্লবের কারণগুলি আলোচনা কর
বিংশ শতকে ইউরোপ
১) রুশ বিপ্লবের কারণগুলি আলোচনা কর।
প্রশ্নের মান -৮
👉ভূমিকাঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন সারা বিশ্ব জীবন মরণ লড়াইয়ে ব্যস্ত তখন রাশিয়ায় এক অন্য বৈপ্লবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাশিয়াতে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে। এই বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার রাজনৈতিক সমাজ ও অর্থনৈতিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এই বিপ্লবের পিছনে ছিল একাধিক কারণ।
👉রাজনৈতিক কারণঃ বিংশ শতকের সূচনায় সমস্ত ইউরোপ যখন গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় উত্তাল তখন রাশিয়াতে ছিল মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসন। জাররা ছিল ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী। অভিজাতরা ছিল শাসন ব্যবস্থার সর্বেসর্বা। দেশের শাসন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের কোন ভূমিকা ছিল না। এমতাবস্থায় ইউরোপের গণতান্ত্রিক আদর্শ সাধারণ মানুষকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুললে রাশিয়ায় রুশ বিপ্লবের পটভূমি তৈরি হয়।
👉কৃষক অসন্তোষঃ রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের ও বেশি ছিল ভূমিদাস। এরা ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণী। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদ করলেও ভূমিদাসদের অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। কেবলমাত্র প্রভুর বদল হয়েছিল। কৃষকরা যারা জমি ফিরে পেয়েছিল তারা দারিদ্র্যের জ্বালায় সেই জমি কুলাকদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। কৃষকরা পুনরায় হয় মজুরে পরিণত হয়েছিল নয়তো শহরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
👉শ্রমিক অসন্তোষঃ রাশিয়ায় শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় একটু দেরিতে। কিন্তু রাশিয়ার সমস্ত কলকারখানার মালিক ছিল অভিজাতরা, নয়তো ইংরেজ, ফরাসি, জার্মানি প্রভৃতি বিদেশীরা। ফলে রাশিয়ার শ্রমিকদের অল্প বেতনে, অস্বাস্থ্যকর, ঝুঁকিবহুল জায়গায় দিন রাত পরিশ্রম করতে হতো। এর ফলে শ্রমিকরা রুশ বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করে।
👉অর্থনৈতিক মন্দাঃ রাশিয়ার আর্থিক মন্দা রুশ জনগণকে বিপ্লবমুখী করে তুলেছিল। রাশিয়ার সমস্ত কলকারখানা ছিল পুঁজি পতিদের হাতে। জার সরকার পুঁজিপতিদের সব রকমের সাহায্য দিত। রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজ কারখানাগুলি বিদেশি পুঁজিতে গড়ে উঠেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল 5495 মিলিয়ন রুবল। এই সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর রাশিয়ার ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এইভাবে রাশিয়ার রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে রাশিয়া বিপ্লবের পথকেই বেছে নেয়।
👉সামাজিক কারণঃ রাশিয়ার সামাজিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। এই সময় রুশ সমাজ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। অভিজাত শ্রেণী- এরা বিলাস-ব্যসনে দিন কাটাতো। কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী - এদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ। এই দুই শ্রেনীর মাঝে ছিল নগণ্য সংখ্যক মধ্যবিত্ত শ্রেণি। রাশিয়ার অশিক্ষিতের হার ছিল সবচেয়ে বেশি। ফলে অশিক্ষিত কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী ভদকা পান করে নানা কু -অভ্যাসে ডুবে থাকতো।
👉রুশিকরণ নীতিঃ রাশিয়ার সমাজে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষ বাস করত। এইসব মানুষের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি আলাদা ছিল। জার সরকার এইসব অরুশ জনগণের উপর নানা কর চাপায়। সেইসঙ্গে তাদের রুশ ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রহণের জন্য চাপ দিতে থাকে। এই রুশিকরণ নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল বিক্ষোভ সঞ্চারিত হয়।
,
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.