সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ দশম শ্রেণী মাধ্যমিক ইতিহাস

 সঙ্ঘবদ্ধতার গড়ার কথাঃ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ 

                    চতুর্থ অধ্যায় 

মাধ্যমিক ইতিহাস থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির প্রশ্ন ও উত্তর 

                                                    প্রতিটি প্রশ্নের মান -৪ 

১) সভা সমিতির যুগে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ও জমিদার সভার কি ভূমিকা ছিল ?

উঃ সভা সমিতির যুগে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ও জমিদার সভার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাঃ ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা গঠিত হয়। টাকির জমিদার কালিনাথ রায় চৌধুরী, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, দ্বারকানাথ ঠাকুর ও রামমোহনের কিছু অনুগামী এই সভা গঠন করেন। গৌরীশংকর তর্কবাগীশের সভাপতিত্বে এই সভার প্রথম অধিবেশন ডাকা হয়।নিস্কর জমির উপর কর আরোপর প্রতিবাদে এই সভা জড়ালো প্রতিবাদ করে।

জমিদার সভাঃ ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ এই সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। রাধাকান্ত দেব, দ্বারকানাথ ঠাকুর ও রামমোহনের কিছু অনুগামী হিন্দু কলেজে মিলিত হয়ে জমিদার সভাকে "ল্যান্ড হোল্ডার্স সোসাইটি" রূপে গঠন করেন। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মতে ,এই সোসাইটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা। জমিদার ও কৃষকদের স্বার্থ সমান ভাবে দেখতো এই সভা। এই সভার সভ্য হতে প্রথমে পাঁচ টাকা এবং পরে বার্ষিক চাঁদা কুড়ি টাকা নিয়মমতো দিতে হত। এই সভার দাবি মেনে নিয়ে সরকার প্রতিটি গ্রামের জন্য কিছু নিষ্কর জমি রাখে। ইংরেজ ও ভারতীয় জমিদাররা এই সভার মাধ্যমে পরস্পর মিলিত হতে পারতেন।

২) রবীন্দ্রনাথের গোরা উপন্যাসে কিভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবোধ ও স্বদেশপ্রেমের ভাবধারার প্রসার ঘটেছে ?

উঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ "গোরা" উপন্যাসটি রচনা করেন। এখানে তিনি সামাজিক, নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় আদর্শ নিয়ে বাঙালির মনের দ্বিধা সংশয় ব্যক্ত করেছেন। 

        বিংশ শতকের প্রথম দিকে বাংলার শিক্ষিত সমাজে উগ্র রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য এক সংকীর্ণ, দাম্ভিক স্বদেশী মনোভাব তৈরি হয়েছিল। গোরা উপন্যাসে সেই সংকীর্ণ অহংকারকে ধ্বংস করে সর্বভারতীয় মানব ধর্মকে সার্থকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভারতের জাতীয় জীবনের গভীর তাৎপর্য ও চরিত্রের বৈচিত্র্যে বিভিন্ন ভাবাদর্শকে মহান সত্যের দিকে চালিত করে গড়া উপন্যাসটি বিশ্ববাসীর কাছে বিস্ময়কর অবদান তুলে ধরেছে। 

৩) টীকা লেখঃ মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র।

উঃ ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি লর্ড ক্যানিং ভারতের প্রথম ভাইসরয় নিযুক্ত হয়ে এলাহাবাদে এক সভার আয়োজন করেন। এই সভায় মহারানীর হয়ে ১৮৫৮ সালে  ১ নভেম্বর তিনি একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এটি মহারানীর ঘোষণাপত্র নামে পরিচিত।

ঘোষনার সিদ্ধান্তঃ ক) দেশীয় অপ পুত্রক রাজাদের দত্তপুত্র গ্রহণের অধিকার দেওয়া হবে। খ) স্বত্ববিলোপ নীতি পরিত্যক্ত হবে গ) ইংরেজ সরকার এদেশে আর সাম্রাজ্য বিস্তার করবে না ঘ) যোগ্যতা অনুযায়ী ভারতীয়দের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করা হবে ঙ) জাতি,ধর্ম,বরণ নির্বিশেষে সকল ভারতীয়কে সমান মর্যাদা দেওয়া হবে।চ) কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমস্ত চুক্তি ও সন্ধিপত্র সরকার পালন করে চলবে।

    সঙ্ঘবদ্ধতার গড়ার কথাঃ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ 

                  চতুর্থ অধ্যায় 

৪) মহারানীর ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য লেখ।

উঃ আগের ৩নং প্রশ্নের উত্তর 

৫) টীকা লেখঃ ভারত সভা 

উঃ ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি ভারত সভা গঠন করেন। এই ভারত সভাকে তিনি আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বলে উল্লেখ করেন। 

উদ্দেশ্যেঃ ভারত সভার চারটি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত- রাজনৈতিক প্রয়োজনে জাতি ধর্ম ও গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করা। দ্বিতীয়ত- দেশ ব্যাপী শক্তিশালী জনমত গঠন করা। তৃতীয়ত- মানুষকে গণআন্দোলনে শামিল করা। চতুর্থত- হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে ঐক্যবোধ জাগ্রত করা।

             ভারতীয় আই.সি.এস পরীক্ষার্থীদের বয়স ২১ থেকে ১৯ বছরে নামিয়ে আনার প্রতিবাদে ও ইলবার্ট বিল আন্দোলনে ভারত সভার বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল।'দি বেঙ্গলি' পত্রিকা ভারত সভার মুখপত্র রূপে জাতীয়তাবাদের বিকাশের সক্রিয় ছিল। এটি সর্বভারতীয় আন্দোলনের মঞ্চ তৈরি করেছিল।

সঙ্ঘবদ্ধতার গড়ার কথাঃ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ 

                    চতুর্থ অধ্যায় 

৬) উনিশ শতকে ভারতের জাতীয়তাবাদের বিকাশে ভারত সভার অবদান লেখ।

উঃ ৫নং প্রশ্নের উত্তর 

৭) ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে আনন্দমঠ উপন্যাসের ভূমিকা লেখ।

উঃ ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "আনন্দমঠ" হল তার প্রথম ঐতিহাসিক গ্রন্থ। এই উপন্যাসের মাধ্যমে ভারতীয জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। 

          এই আনন্দমঠ গ্রন্থে তিনি সংগ্রামী জাতীয়তাবাদের আদর্শ তুলে ধরেছিলেন। এই গ্রন্থেই তিনি একদল দেশপ্রেমিকের আত্মোৎসর্গের কথা ব্যক্ত করেছেন। তৎকালীন বাংলার যুব সম্প্রদায়কে স্বদেশপ্রীতি ,দেশপ্রেম ও সক্রিয়তা জাতীয়তাবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এই গ্রন্থ থেকেই প্রমথ নাথ মিত্র অনুশীলন সমিতি নামটি গ্রহণ করেছিলেন। অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীদের কাছে আনন্দমঠ ছিল সংগ্রামীদের জাতীয়তাবাদের গীতা। এই মাধ্যমেই তিনি সকল দেশবাসীর মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তুলেছিলেন।

৮) ভারত সভার উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী লেখ।

উঃ ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে জুলাই সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি ভারত সভা গঠন করেন। এই ভারত সভার উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

উদ্দেশ্যঃ ভারতসভার চারটি উদ্দেশ্য ছিল- (১) রাজনৈতিক প্রয়োজনে জাতি, ধর্ম ও গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করা। (২) দেশব্যাপী শক্তিশালী জনমত গঠন করা। (৩) মানুষকে গণআন্দোলনে শামিল করা।(৪) হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে ঐক্যবোধ জাগ্রত করা। 

কার্যাবলীঃ সুরেন্দ্রনাথ মিরাট, লখনউ, লাহোর প্রভৃতি স্থানে বক্তৃতার মাধ্যমে ভারতীয় ঐক্য, শিবশক্তির উত্থান প্রভৃতিতে উজ্জীবিত করেছিল। ইতালির ঐক্য আন্দোলনের নেতা ক্যাভুর, মাৎসিনির দেশপ্রেমের আদর্শ বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছিলেন। শিক্ষিত বাঙালি সম্প্রদায় জনমত গঠনে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। সুরেন্দ্রনাথের নাম যুবশক্তিকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করেছিল। ভারতীয় আই.সি.এস পরীক্ষার্থীদের বয়স ২১ থেকে ১৯ বছরের নামিয়ে আনার প্রতিবাদে ও ইলবার্ট বিল আন্দোলনে ভারত বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল। 

সঙ্ঘবদ্ধতার গড়ার কথাঃ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ 

                    চতুর্থ অধ্যায় 

৯) ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সম্পর্কে শিক্ষিত বাঙ্গালীদের মনোভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উঃ শিক্ষিত বাঙালি সমাজ ১৮৫৭ বিদ্রোহকে সমর্থন করেননি। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণী তাই বিদ্রোহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বাঙালি শিক্ষিত সমাজের গর্ব হিন্দু প্যাট্রিয়ট এর সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সিপাহী বিদ্রোহের সময় তৎকালীন ভারতের বড়লাট লর্ড ক্যানিংয়ের নরম মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। ভারতের জাতীয়তাবাদের জনক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই বিদ্রোহকে মহামারীর মতো ভীতিকর মনে করেছেন। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে সহযোগিতা করে মাথা নত করে তাদের শাসনকে মেনে চলা উচিত বলে উপদেশ দিয়েছেন। সিপাহীরা অত্যাচারী ও উচ্ছৃংখল প্রকৃতির বলে যদুনাথ সর্বাধিকারী তার তীর্থভ্রমণ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বলেছেন যেন চিরকাল ব্রিটিশের জয় হয়। এভাবেই বাঙালি শিক্ষিত সমাজের মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়।

১০) জাতীয়তাবাদের বিকাশে বর্তমান ভারত গ্রন্থের ভূমিকা কি ছিল?

উঃ স্বামী বিবেকানন্দ বাংলা ভাষায় বর্তমান ভারত প্রবন্ধটি লিখেছিলেন। স্বামী শুদ্ধানন্দ পুস্তক আকারে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান ভারত বইটি প্রকাশ করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি ভারতীয়দের মনে জাতীয়তা বোধের বীজ বপন করেছিলেন।

          এর মাধ্যমে তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এক উদার ও আদর্শগত গৌরববোধ জাগ্রত করে জাতীয়তাবাদের পথ প্রশস্ত করেন। জাতীয়তাবাদের নবজাগরণ ঘটাতে এক যথার্থ দেশপ্রেমিকের মত তিনি জাতপাত, ধর্মীয় গোড়ামী, অবিচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। জাতির সর্বাঙ্গীন উন্নতি সাধনের জন্য তিনি ঐক্য, আত্মবিশ্বাসের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এই গ্রন্থে তিনি লিখেছিলেন, ত্যাগ ও সেবার মহান আদর্শে ভারত সমুজ্জ্বল হবে। ভারতীয় সমাজ থেকে বর্ণবৈষম্যের অবসান না হলে সার্বিক জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটবে না। তিনি জাতিভেদ ভুলে সকল ভারতবাসীকে ভাতৃত্ব জ্ঞানে দেখার কথা বলেছেন। স্বামীজীর মতে, ভারতে প্রকৃত জাতীয়তাবোধের বিকাশ সেই দিনই ঘটবে যেদিন শূদ্রদের জাগরণ, নারীর অধিকার, শিক্ষা ও স্বাধিকার স্বীকৃতি পাবে। এভাবেই তিনি এই গ্রন্থে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন।


Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)