সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস বিষয়ের প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের দুই ও পাঁচ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়
সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় ও প্রথম অধ্যায় ২নং প্রশ্ন ও উত্তর
১) নির্বাণ কি ?
উঃ নির্বাণ শব্দের অর্থ হল মুক্তি। বৌদ্ধধর্ম অবলম্বনকারী মানুষেরা মনে করেন যে নির্বাণ বা মুক্তি লাভ করলে মানুষের আর পুনর্জন্ম হবে না।হীনযানপন্থি অশ্বঘোষের মতে তেল ফুরিয়ে গেলে যেমন প্রদীপ শিখা নিভে যায়, মানুষের ক্লেশ ও দুঃখের অবসান ঘটলে তেমনি নির্বাণ ঘটে। অন্যদিকে মহাযানপন্থীরা মনে করেন যে, নির্বাণ হলো এমন একটা অবস্থা যেখানে কোন কিছুই নেই।
২) টীকা লেখ- রামচরিত
উঃ প্রাচীন বাংলার এক অন্যতম সাহিত্য কীর্তি হলো রামচরিত কাব্য। এই কাব্যের রচয়িতা হলেন কবি সন্ধ্যাকর নন্দী। পাল রাজা, রামপালের পুত্র মদন পালের শাসনকালে গ্রন্থটি রচিত হয়।
বিষয়বস্তুঃ রামচরিত কাব্যের বিষয়বস্তু রামায়ণের গল্প অনুসরণে লেখা হয়েছে। কাব্যটিতে কবি একদিকে রামায়ণের রামচন্দ্র অপরদিকে পাল রাজা রাম পালের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। কাব্যটিতে খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের বাংলার প্রেক্ষাপটে এক রাজনৈতিক ও সামাজিক আদর্শ প্রচারিত হয়েছে কাব্যটিতে সীতার রূপ বর্ণনার মাধ্যমে বরেন্দ্রভূমি এবং তার চারপাশের অঞ্চলের ফুল ফল গাছপালা ফসল বর্ষাকাল ইত্যাদির বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
রামায়ণের সঙ্গে সাদৃশ্যঃ রামায়ণের আদলে লেখা হলেও কাব্যটি শুধুমাত্র বাল্মিকী রামায়ণের পুনরাবৃত্তি নয়। এখানে রামায়ণের অযোধ্যার বদলে রামপালের রাজধানী অমরাবতীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রামায়ণের সীতা উদ্ধারের কাহিনীর সঙ্গে রামপালের বরেন্দ্রভূমি উদ্ধারের তুলনা করা হয়েছে। রামায়ণে যেমন সীতার খোঁজে রামের বন, পাহাড় ঘুরে ঘুরে বেড়ানোর কথা বলা হয়েছে, তেমনি নিজের রাজ্যে সামন্তদের সমর্থন জোগাড়ের জন্য নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই সামন্তদের সাহায্যে রামপাল কৈবর্তদের হাত থেকে নিজের পিতৃভূমি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন।
উপসংহারঃ কাব্যটিতে কবি সন্ধ্যাকর নন্দী রাম এবং রামপালের গল্প লিখেছেন। এর ভাষা অত্যন্ত জটিল করে ফেলেছেন। সংস্কৃত ভাষায় এই কাব্য পন্ডিত ও শিক্ষিত শ্রেণির জন্য লেখা হয়েছিল। সাধারণ মানুষের এই কাব্য পড়ার সামর্থ্য ছিল না। তবে এর ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।
৩) টীকা লেখ- অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান
উঃ বাংলার বৌদ্ধ আচার্যদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও শ্রেষ্ঠ পন্ডিত ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর। তিনি ওদন্তপুরী বিহারের আচার্য শীল রক্ষিতের কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিব্বতের মানুষ তাকে অতীশ দীপঙ্কর নামে সম্মানিত করেছে।
জন্মস্থানঃ
বংগাল অঞ্চলে বিক্রমনিপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে আনুমানিক 980 খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্রাহ্মণ্য মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না বলে তার বাড়ি আজও "নাস্তিক পন্ডিতের ভীটা" নামে পরিচিত।
আচার্য ও অধ্যক্ষ পদঃ
সম্ভবত তিনি বিক্রমশীল, ওদন্তপুরী এবং সোমপুরী মহাবিহারের আচার্য ও অধ্যক্ষ ছিলেন।
তিব্বত গমনঃ
একাদশ শতকে পালরাজা ন্যায়পালের রাজত্বকালে তিব্বতের রাজা জ্ঞানপ্রভের আমন্ত্রণে তিব্বতে আসেন। তিব্বতের অনাচার কলুষিত বৌদ্ধধর্ম সংস্কারের জন্য তাকে আহ্বান জানান। বয়সের ভার ও মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে মাত্র চারজন সঙ্গীসহ তিনি দুর্গম হিমালয় অতিক্রম করে তিব্বতে উপস্থিত হন।
তিব্বতে কার্যকলাপঃ
দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তিনি তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম সংস্কার করতে থাকেন। সেখানে তিনি মহাযান বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন এবং বৌদ্ধধর্মকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এসময় তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন।
গ্রন্থাবলীঃ
তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় দুশো। এগুলির মধ্যে বোধিপথ প্রদীপ, পিন্ডার্থ -প্রদীপ, প্রজ্ঞাপারমিতা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিব্বতীয় ভাষাতেও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন ,এগুলির মধ্যে অঞ্জুর ও কঞ্জুর এখনো বর্তমান। তিনি অনেক সংস্কৃত গ্রন্থ ভোট ভাষায় অনুবাদ করেন তার মূল সংস্কৃত গ্রন্থ গুলি পাওয়া না গেলেও তিব্বতি ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ গুলি পাওয়া যায়। তিনি তিব্বতে বুদ্ধের অবতার রূপে পূজিত হন।
মৃত্যুঃ
এই বিখ্যাত বৌদ্ধ পন্ডিত আনুমানিক ১০৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতের রাজধানী লাসার কাছে পরলোকগমন করেন। তার সমাধিক্ষেত্র আজও পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়।
উপসংহারঃ
শুধু তিব্বতে নয়, বাংলা ও বিহারের ওপর তার প্রভাব ছিল গভীর। তিব্বতের মানুষ তাকে অতীশ দীপঙ্কর নামে সম্মানিত করেছেন। অতীশ কথার অর্থ হল প্রভু। তিব্বত, করিয়া ও দক্ষিণ চিনে অতীশ দীপঙ্কর দ্বিতীয় বুদ্ধ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিব্বতীয়রা আজও তাকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করে।
৪) টীকা লেখ - বিক্রমশীল মহাবিহার
উঃ নালন্দা মহাবিহারের খ্যাতি যখন ধীরে ধীরে কমে আসছিল তখন উচ্চশিক্ষার স্থান হিসেবে বিক্রমশীল মহাবিহারটির উত্থান ঘটে। নবম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়কালে এই মহা বিহারের খ্যাতি চরমে পৌঁছেছিল।
প্রতিষ্ঠাঃ
পাল রাজা ধর্মপাল আনুমানিক নবম শতকে বিহারের ভাগলপুরে নালন্দা মহাবিহার এর কাছেই এই মহা বিহার টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
প্রবেশিকা পরীক্ষাঃ
এই মহাবিহারে ভর্তি হতে গেলে কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হতো।
পরিকাঠামোঃ
১০০ জনেরও বেশি আচার্যের তত্ত্বাবধানে এই বৌদ্ধ বিহারের ধর্মচর্চা চলতো ও ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়া হতো দেশ-বিদেশের প্রায় তিন হাজার জন ছাত্র এখানে শিক্ষা লাভ করত শিক্ষাদান ছিল অবৈতনিক বিহারটিতে একটি বড় গ্রন্থাগার ও ছিল।
পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়নঃ
বজ্রযান বৌদ্ধমত চর্চার এই কেন্দ্রে ব্যাকরণ দর্শন তর্কশাস্ত্র জ্যোতিষ শাস্ত্র গণিত চিকিৎসা বিদ্যা নীতি শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে পড়ানো হতো শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্রদের মূল্যায়ন ভিত্তিক উপাধি প্রদানের ব্যবস্থাও ছিল।
উপসংহারঃ
তুর্কি আক্রমণকারী এখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংস করেন। এই বিহারটি নালন্দা মহাবিহারের পরিপূরক ছিল।
৫) টীকা লেখ- নালন্দা মহাবিহার
উঃ গুপ্ত সম্রাটদের আমলে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে বর্তমান বিহার রাজ্যে শিক্ষা দীক্ষার পিঠস্থান হিসেবে নালন্দা মহাবিহার গড়ে ওঠে।
খ্যাতিঃ এই মহাবিহারের শিক্ষা দীক্ষার খ্যাতি বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
সাহায্য লাভঃ
হর্ষবর্ধন ও পাল রাজাদের আমলে শাসকগণ জমির মালিকগণের পাশাপাশি সুদূর সুমাত্রা দ্বীপের শাসক এই মহাবিহারে সম্পদ দান করেন। এই দানের অর্থ থেকে ছাত্রদের বিনা পয়সায় খাবার, জামাকাপড়, সজ্জা দ্রব্য এবং ঔষধ পত্র দেওয়া হতো।
ছাত্র শিক্ষকঃ
সুদূর তিব্বত, চিন, কোরিয়া এবং মঙ্গোলিয়ার ছাত্ররা এখানে পড়াশোনার জন্য আসতো। এখানকার ১০০০০ জন আবাসিক ভিক্ষুর মধ্যে শিক্ষক ছিলেন দেড় হাজার জন এবং ছাত্র ছিল সাড়ে আট হাজার।
৬) সেন যুগের সাহিত্য সম্পর্কে লেখ।
উঃ সংস্কৃত সাহিত্যের ক্ষেত্রে সেনযুগ ছিল সুবর্ণ যুগ। হিন্দু শাস্ত্রে সুপন্ডিত সেন রাজা বল্লাল সেন দানসাগর ও অদ্ভুতসাগর গ্রন্থে হিন্দুদের আচার অনুষ্ঠান ও দানকর্ম বিষয়ে বিবরণ দিয়েছেন।
তার পুত্র লক্ষণ সেন ছিলেন একজন সুকবি। তিনি পিতার অসমাপ্ত গ্রন্থ "অদ্ভুতসাগর" সমাপ্ত করেন। বল্লাল সেনের গুরু অনিরুদ্ধ ভট্ট হারলতা ও পিতৃদ্বয়িতা নামক দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি হিন্দুদের অনুষ্ঠান ও নৃত্য কর্মের আলোচনা করেন।
এছাড়াও সেই যুগের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কবি হলেন হলায়ূধ। তার রচিত "ব্রাহ্মণ সর্বস্ব" গ্রন্থে হিন্দুদের আহ্নিক ও বৈদিক মন্ত্রাদির ব্যাখ্যা করেছেন। এছাড়া তার মীমাংসা সর্বস্ব ও বৈষ্ণব সর্বস্ব গ্রন্থ অতি উল্লেখযোগ্য। ভাষা তত্ত্বের ক্ষেত্রে সুপন্ডিত সর্বানন্দ রচিত 'টিকাসর্বস্ব' ভারতের সর্বত্র সমাদৃত। লক্ষণ সেনের রাজ্সভায় পঞ্চরত্ন(শরণ,ধোয়ী, গোবর্ধন উমাপতিধর ও জয়দেব) সংস্কৃত সাহিত্য ভান্ডারকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। গোবর্ধন রচিত প্রবন্ধ কাব্য কালিদাসের মেঘদূতের অনুকরণে রচিত। উমাপতিধরের চন্দ্রচূড় গ্রন্থটি সে যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দ কাব্য একটি অনন্য সৃষ্টি। এই কাব্যে তিনি রাধা কৃষ্ণের প্রেম লীলার বর্ণনা দিয়েছেন।
৭) সামন্ত প্রথা কাকে বলে ? ইউরোপের সামন্ত প্রথা সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উঃ মধ্যযুগের ইউরোপে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক থেকে ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে জমির বিশেষ সত্যের উপর ভিত্তি করে যে সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে সামন্ততন্ত্র বলে।
সামন্ততান্ত্রিক সমাজঃ মধ্যযুগে সূচনায় ইউরোপে বর্বর আক্রমণ শুরু হলে তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাজাদের ছিল না। তাই রাজারা বাধ্য হয়ে নিজ নিজ অঞ্চলের কিছু কিছু রাজনৈতিক সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা স্থানীয় শক্তিশালী ভূ স্বামীদের ছেড়ে দেন। এভাবে ইউরোপে সামন্ত প্রথার বিকাশ হতে থাকে। মধ্যযুগের ইউরোপে সামন্ত ব্যবস্থার প্রভাব ছিল ব্যাপক তাই ঐতিহাসিকরা মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় সমাজকে সামন্ততান্ত্রিক সমাজ বলে চিহ্নিত করেছেন।
সামন্ত প্রথার বৈশিষ্ট্যঃ
সামন্ত প্রথার উৎপত্তির কারণঃ
উপসংহারঃ
৮)
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.