সংস্কৃত সাহিত্যে বিশাখ দত্ত সম্পর্কে যা জানো লেখ
১) সংস্কৃত সাহিত্যে বিশাখদত্ত সম্পর্কে যা জানো লেখ।
উঃ অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার বিশাখ দত্ত মুদ্রারাক্ষস নামক নারীবর্জিত ঐতিহাসিক নাটক রচনা করে সংস্কৃত সাহিত্য জগতে নিজ মাহাত্ম্যে এবং গৌরবে এক অদ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন । নতুন প্রকৃতির এই নাটকটি পাঠক রশিকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছে।
নাট্যকার পরিচিতিঃ
নাট্যকার বিশাখ দত্ত তার নিজের আত্মপরিচয় সম্পর্কে খুব অল্পই বলেছেন। প্রস্তাবনা থেকে জানা যায় নাট্যকার রাজবংশজাত হওয়ায় তিনি রাজনীতিতে দক্ষ ছিলেন । বিশাখ দত্তের পিতামহ শ্রীবটেশ্বর দত্ত বৎসরাজ দেশের সামন্ত রাজা ছিলেন। পিতা ভাস্কর দত্ত মহারাজা উপাধিতে অলংকৃত ছিলেন। বিশাখদত্ত নিজেও মহা সম্মানসূচক দেব উপাধি লাভ করেছিলেন । ফলে কিছু কিছু পাণ্ডুলিপিতে বিশাখদত্ত স্থানে লেখা রয়েছে বিশাখদেব। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র এবং শুক্রনীতিশাস্ত্রে তিনি প্রকান্ড বিদ্বান ছিলেন। জ্যোতিঃদর্শন এবং ন্যায় শাস্ত্রের তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল।বৈদিক ধর্মাবলম্বী হলেও তার ধর্ম ছিল উদার। নাটকের নান্দী -অংশে নাম উল্লেখ থাকায় তাকে শিবভক্ত বলে মনে করা হয়। উদারচেতা বিশাখদত্ত বৌদ্ধ ধর্মকে সম্মান করতেন।
আবির্ভাবকালঃ
নাট্যকার বিশাখা দত্তের আবির্ভাব কাল নিয়ে নানা মতভেদ দেখা যায় ।
রচনাবলীঃ
বিশাখদত্তের রচনা গুলি হল মুদ্রারাক্ষস, দেবী চন্দ্রগুপ্ত, অভিসারিকাবঞ্চিতক, রাঘবানন্দ ।
মুদ্রারাক্ষসঃ
মুদ্রারাক্ষস এর মূল কাহিনী পুরান, ইতিহাস লোককথায় রয়েছে । মুদ্রার সাহায্যে পরাজিত পক্ষ থেকে স্বপক্ষে আনিত রাক্ষস এই নাটকের মূল বিষয় বলেই নাটকের নামকরণ মুদ্রারাক্ষস হয়েছে।
বিষয়বস্তুঃ
এই সাত অঙ্কের নাটকের প্রধান নায়ক চাণক্য। তিনি নন্দবংশ ধ্বংস করে আপনার ভক্ত শিষ্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকি নন্দরাজের প্রভুভক্ত অমাত্য রাক্ষসকেও নিজ পক্ষে এনে তাকে চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রীপদ প্রদানে প্রয়াসী হন। তার জন্য যে বুদ্ধি কৌশলের সংঘর্ষ হয়েছে সেটাই নাটকের মেরুদন্ড। প্রথম অংকে- চাণক্য গুপ্তচরের মাধ্যমে জানতে পারেন কুসুমপুরের তিন ব্যক্তি রাক্ষসের বন্ধু। তারা হলেন ক্ষপণক, কায়স্থ, জিসিদ্ধি, শকট দাস এবং মনিকার শ্রেষ্ঠ চন্দনদাস। এই চন্দন দাসের ঘরে রাক্ষসের মুদ্রাসহ আত্মীয়কে পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় অঙ্ক - রাক্ষস শতচেষ্টা করেও কুসুমপুরের চন্দ্রগুপ্তকে আঘাত করতে পারেনি ।
তৃতীয় অঙ্ক - কৌমুদী মহোৎসব বাতিলের ঘটনা আছে।
চতুর্থ অঙ্ক - রাক্ষসের নিজের কথা আছে।
পঞ্চম অংক - নাটকের গর্ভসন্ধি। রাক্ষসের সঙ্গে বিরোধ মলয়কেতু তার সহযোগীসহ ধরা পড়েছে।
ষষ্ঠ রাক্ষস - কুসুমপুরে এসে তার বন্ধু চন্দন দাসের প্রাণদণ্ডের আদেশ শুনেছে ।
সপ্তম অংকঃ
রাক্ষস তার বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য চাণক্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রিত্ব স্বীকার করেছে।
নাট্যবৈশিষ্ট্যঃ
সংস্কৃত সাহিত্যের প্রধান স্ত্রী ভূমিকা বর্জিত একমাত্র ঐতিহাসিক নাটক মুদ্রারাক্ষস। এতে প্রেমের কোন স্থান নেই। এই নাটকে নায়িকা এবং বিশেষকরে একান্ত অভাব লক্ষ্য করা যায়। বিদ্যুৎ না থাকার ফলে সমগ্র নাটকে হাস্যরসের অভাব দেখা যায়। নাট্যকারের রচনাশৈলী বেশ বলিষ্ঠ। তার ভাষা সংযত প্রাঞ্জল ও তেজস্বী । অপ্রয়োজনীয়' অলংকার তিনি বর্জন করেছেন । দুই মুখ্য চরিত্র চাণক্য এবং রাক্ষস উভয়ই ধুরন্ধর, একনিষ্ঠ শাসন ক্ষমতায় দক্ষ কিন্তু চাণক্য ধীর-স্থির , আত্মপ্রত্যয় নির্ভর ও সদাসতর্ক। চাণক্যের তুলনায় রাক্ষসের নীতি সফল নয় । রাক্ষস মানবতা, কোমল হৃদয় প্রকৃতি গুনে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে। আর মুদ্রারাক্ষস এর নায়ক চন্দ্রগুপ্ত ধীরোদাত্ত নায়ক আপন গুরুর কর্মকুশলতা ,কূটনীতি ,পটুতার প্রতি তিনি অন্ধ বিশ্বাসী। তিনি বীরযোদ্ধা ,অনুভবী শাসক এবং সব কাজে সিদ্ধহস্ত পুরুষ । এই নাটকের কূটনীতির অতি সূক্ষ্ম প্রয়োগকে নাট্যকারের নৈপুণ্যে ঘটনাপ্রবাহের জটিলতা সৃষ্টি করেনি ।
মূল্যায়নঃ
পরিশেষে বলা যায়, ভাব ও ভাষার সমন্বয়, রচনাশৈলী ,কাহিনীবিন্যাস, সংলাপ, পরিকল্পনা ও পরিবেশনা, প্রকৃতির বর্ণনা প্রভৃতি লক্ষ্য করে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে মুদ্রারাক্ষস নাটকটি বিশাখদত্তের শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.