মাধ্যমিক ভূগোল
প্রশ্নঃ- ভারতের পলি মৃত্তিকা এবং কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ- পলি মৃত্তিকাঃ
ভারতের বিশাল সমভূমি অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায় ।সাধারণভাবে এই মৃত্তিকা নদী দ্বারা সঞ্চিত হয় । তবে উপকূল অংশে সমুদ্র বাহিত পলি সঞ্চিত হয়েও এই মৃত্তিকা সৃষ্টি করে থাকে ।এই মৃত্তিকা ভারতে প্রায় অর্ধেক ভূভাগ জুড়ে অবস্থান করেছে।এই মৃত্তিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা ১) নদীর নবীন পলি দ্বারা গঠিত খাদার মৃত্তিকা এবং ২) নদীর প্রাচীন পলি দ্বারা গঠিত মৃত্তিকা ভাবর মৃত্তিকা ।
পলি মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যঃ
(১) অবস্থানের তারতম্য অনুসারে বিভিন্ন অঞ্চলের পলিমাটির রং বিভিন্ন রকমের হয়।
(২) যে পলিমাটিতে বালি বেশি, সেই মাটি হালকা এবং যে মাটিতে পলির ভাগ বেশি সেই মাটি ভারী হয়।
(৩) এই মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এই মাটি অতি উর্বর।
(৪) অঞ্চলভেদে পলিমাটির উপাদানের তারতম্যের ফলে মাটির উর্বরতারও তারতম্য হয়।
(৫) এই মৃত্তিকায় ধান, পাট, গম, আখ,কার্পাস, তুলা প্রভৃতি ফসল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
কৃষ্ণমৃত্তিকাঃ
দাক্ষিণাত্যের লাভা মালভূমি অঞ্চলে ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায় । এই মাটি রেগুর মৃত্তিকা নামেও পরিচিত।
কৃষ্ণমৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যঃ
(১) কালাে রঙের ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কৃষ্ণমৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে বলে এই মাটির রং কালাে।
(২) এতে পলি ও কাদার ভাগ বেশি হওয়ায়, এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি।
(৩) এই মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম থাকলেও ক্যালশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি খনিজপদার্থ থাকায় এই মাটি অত্যন্ত উর্বর হয়।
(4) এই মৃত্তিকায় কাদার ভাগ বেশি বলে গ্রন্থন সুষম নয়।
(৫) এই মৃত্তিকা বর্ষাকালে চটচটে বা আঠালাে প্রকৃতির হলেও শুষ্ক ঋতুতে বেশ শক্ত।
প্রশ্নঃ উত্তর ভারতের নদীগুলির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
উঃ নিত্যবহতাঃ উত্তর ভারতের নদীগুলি বৃষ্টির জল ও বরফ গলা জলে পুষ্ট। তাই নদী গুলিতে সারা বছর জল থাকে অর্থাৎ নদীগুলি নিত্যবহ।
গতিপথঃ নদী গুলির উচ্চ মধ্য ও নিম্ন তিনটি গতি সুস্পষ্ট।
গতিপথের প্রকৃতিঃ নদীগুলি নবীন এবং সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রায়ই গতিপথ পরিবর্তন করে। তাই এদের গতিপথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।
পলি সঞ্চয়ঃ নদীগুলি খরস্রোত যুক্ত হওয়ায় ভূমিক্ষয় বেশি হয়। তাই খইত পদার্থের সঞ্চয় ঘটে।
নাব্যতাঃ নদীগুলিতে সারা বছর জল থাকে এবং সমভূমিতে নদীর গতিবেগ কম থাকায় নৌপরিবহনের উপযোগী।
প্রশ্নঃ দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
নিত্যবহতাঃ বেশির ভাগই বৃষ্টির জলে পুষ্ট। তাই শুষ্ক ঋতুতে নদীগুলির জল হ্রাস পায়। তাই নদীগুলি অনিত্যবহ ।
গতিপথঃ গতিপথের বিভিন্ন পর্যায় অস্পষ্ট।
গতিপথের প্রকৃতিঃ নদীগুলি বয়সে প্রাচীন এবং গতিপথ পরিবর্তন করে না। এদের গতিপথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায় না।
পলি সঞ্চয়ঃ নদীগুলির ক্ষয় সাধন ক্ষমতা যথেষ্ট কম। তাই সমভূমিতে পলি সঞ্চয়ের পরিমাণও কম হয়।
নাব্যতাঃ নদীগুলিতে সারা বছর জল থাকে না এবং মালভূমির দিয়ে প্রবাহিত হয়ায় খরস্রোত হয়।তাই নদীগুলি নৌপরিবহনের অনুপযোগী।
প্রশ্নঃ ভারতের জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের পাঁচটি কারণ আলোচনা কর।
উঃ ভারতের জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণ গুলিকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথা- ক) প্রাকৃতিক কারণ খ) অর্থনৈতিক কারণ এবং গ) সামাজিক কারণ ।
১) ভূ- প্রকৃতিঃ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি বিভিন্ন রকম। তাই পাথুরে, ধস, খাড়া ঢালযুক্ত অঞ্চলে কম লোক বাস করে। অপরদিকে সমতল উর্বর পোলে মাটি যুক্ত অঞ্চলে অতি ঘন জনবসতি লক্ষ্য করা যায়।
জলবায়ুঃ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে শৈত্যের জন্য প্রায় জনহীন এবং মৌসুমী জলবায়ু যুক্ত অঞ্চলে ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে। আবার উষ্ণ শুষ্ক মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও পানীয় জলের অভাব থাকায় কম জনবসতি লক্ষ্য করা যায়।
শিল্পাঞ্চলঃ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে জীবিকার সুবিধা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে অতি ঘন জনবসতি গড়ে ওঠে। বিভিন্ন পণ্যের খুচরো ও পাইকারি কেনাবেচা এবং প্রচুর কর্মসংস্থানের সুবিধার জন্য বাণিজ্য কেন্দ্রগুলিতে অধিক জনবসতি লক্ষ্য করা যায়।
সামাজিক কারণঃ বিভিন্ন ধর্ম অবলম্বনকারী মানুষের ধর্মীয় আচার পালনের জন্য তীর্থস্থান গড়ে ওঠে। ফলে সেই সব স্থানে নিবিড় জনবসতি গড়ে উঠেছে। আবার নালন্দা আলিগড় শান্তিনিকেতন শিক্ষা সংস্কৃতির কেন্দ্ররূপে জনবহুল স্থানে পরিণত হয়েছে।
মৃত্তিকা ও কৃষিঃ পলি, দোঁয়াশ ও কৃষ্ণ মৃত্তিকার উর্বরতার জন্য কৃষিকাজ ভালো হয় ফলে ঘন জনবসতি গড়ে ওঠে। তেমনি রেগুর মৃত্তিকা যুক্ত অঞ্চলে কম জনবসতি লক্ষ্য করা যায়।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.