বাংলা ভাবসম্প্রসারণ
১) নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে কহে,
যাহা কিছু সুখ সকলি ও-পারে।
ভাবসম্প্রসারণঃ নদী তার উৎস স্থল থেকে ভূখণ্ডের বুক চিরে প্রবাহিত হয়। ফলে আপাতদৃষ্টিতে ভূখণ্ডের উপরিভাগ দুটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং মাঝে বয়ে চলে প্রবাহমান জলরাশি। নদীর এক তীর অপর তীরের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের খারাপ ভাগ্য মনে করে ভারাক্রান্ত মনে বলে , ওপারে সকল সুখ ও পরম শান্তি বিরাজ করেছে। আবার অপর তীর এই তীরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একই কথা বলে।
এই জগতে কেউ সুখী নয়। সকলেই অতৃপ্ত। নিজের যতটুকু আছে ততটুকু নিয়ে কোন মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। সকলেই মনে করে তারই জীবন কেবল যন্ত্রণাময়। অন্যের জীবন তার চেয়ে মনোরম। দরিদ্ররা মনে করে ধনী ব্যক্তিরাই সুখী আবার ধনী ব্যক্তি মনে করে দরিদ্ররাই প্রকৃত সুখী। এই অতৃপ্তির জন্যই মানুষ তার নিজের জীবনকে ঠিকমতো উপভোগ করতে পারে না। তাই জীবনে ভালো মন্দ যাই আসুক সত্যকে মেনে নেওয়াই শ্রেয়। তাই জীবনে যা পেয়েছি তাকে মেনে নিলেই প্রকৃত সুখ পাওয়া যাবে।
২) জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে,
সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত,
একই রবিশশী মোদের সাথী।
ভাবসম্প্রসারণঃ সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় এই পৃথিবীতে মানুষ নিশ্চিন্ত মনে প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধ নিয়ে সুখে বসবাস করত। সারা জগত জুড়ে একটাই জাতি ছিল, সে জাতি মানুষ জাতি। তারা সকলেই এই পৃথিবীর শস্য, আলো, বাতাস গ্রহণ করে বেঁচে থাকত। সেই মানবজাতি একই রবিশশীকে সাথে নিয়ে জীবনকে উপভোগ করতো।
কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে চলেছে জাতপাতের লড়াই। বর্ণবৈষম্য চরম শিখরে পৌঁছেছে। ভাষাগত, ধর্মগত নানা সংঘাতে মানুষ আজ জর্জরিত। এই ধর্মগত বিদ্বেষ থেকেই জন্ম নিচ্ছে মুসলিম দেশ, হিন্দু দেশ, খ্রিস্টান দেশ। মানুষের জাতপাতের বিভেদ সৃষ্টি থেকেই নানা সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তাই সমস্ত জগৎ জুড়ে মানুষের একটাই পরিচয় হওয়া উচিত - সে মানুষ। এই সত্যটি উপলব্ধি না করে মানুষ নিজেদের মধ্যে নানা বিভেদ সৃষ্টি করেছে। যেদিন মানুষ বুঝতে পারবে এই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এক অখন্ড মানবজাতির অন্তর্গত সেদিনই মানুষ প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারবে।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.