বাংলা প্রবন্ধ রচনা
যে সকল প্রবন্ধ রচনাগুলি এখানে পাবেন সেগুলি নীচে দেওয়া হল
(১) মানব জীবনে বিজ্ঞান
(২) ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ
( ৩) বাংলার উৎসব
( ৪) শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা
১) মানব জীবনে বিজ্ঞান
ভূমিকা :
বর্তমান সভ্যতা বহু শতাব্দীর স্বপ্ন ও সাধনার ফসল। মানুষ তার যুগ-যুগান্তরের স্বপ্ন ও সাধনা দিয়ে গড়ে তুলেছে সভ্যতার এই বিশাল ইমারত। সভ্যতার মূলে সে দিয়েছে বাহুর শক্তি, মস্তিষ্কের বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি এবং হৃদয়ের ভালোবাসা।ক্রমাগত অনুশীলনে বুদ্ধি যত পরিণত হয়েছে ততই সুখ-স্বাচ্ছন্দ মানুষের কাছে ধরা দিয়েছে, অগ্রসর হয়েছে সভ্যতার রথচক্র।
বিজ্ঞানের আবিষ্কার :
আগুনের উৎপত্তি থেকেই বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের পরিচয়। সেই পরিচয় ক্রমে প্রসারিত হয়েছে গভীর বিস্তৃততর পরিবেশে। সভ্যতার ঊষালগ্নে অসহায় অরণ্যচারী গুহাবাসী মানুষ আকাশের মেঘ ও বিদ্যুৎ কে ভয় করত। কিন্তু আজ মানুষ সভ্যতার বলে বলিয়ান হয়ে মেঘকে করেছে বশীভূত, বিদ্যুৎকে করেছে প্রদানত। বহু আন্দোলন ও বিপ্লব অতিক্রম করে মানুষ যেদিন জীবনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক দৃষ্টি আলোকে দেখবার সুযোগ পেয়েছে সেদিন থেকেই বিজ্ঞানের অবাধ অভিযান শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা :
বিজ্ঞানের বলে মানুষ আজ খনির অন্ধকারে জ্বালিয়েছে আলো। ঘুম ভাঙিয়েছে পাতাল পুরীর ঘুমন্ত রাজকন্যার। পৃথিবীর শৈশবের জড়তা কাটিয়ে এনে দিয়েছে যৌবনের অফুরন্ত উল্লাস।বিজ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে মানুষ নদীর স্রোতকে বশীভূত করে উৎপন্ন করেছে বিদ্যুৎ। জলসিঞ্চনের দ্বারা মরুভূমি হয়েছে শস্যবতী। ধরণীর অনুর্বরতা দূর করে তাকে করে তুলেছে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা।বিজ্ঞানের অপরিসীম দানে ছুটেছে মোটর, ট্রেন, আকাশে উড়ে চলেছে বিমান, মহাশূন্যে পাড়ি দিচ্ছে রকেট প্রভৃতি।
প্রাত্যহিক জীবন ও বিজ্ঞান :
মানব সভ্যতায় বিজ্ঞানের সর্বব্যাপক প্রভাবে মানুষ আজ সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞান নির্ভর। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে বিজ্ঞানের প্রভাব স্পষ্ট। প্রভাতে শয্যাত্যাগ থেকে শুরু করে নিশীথের শয্যাগ্রহণ পর্যন্ত বিজ্ঞান মানুষের সঙ্গী। শয্যা ত্যাগ এর পর দাঁত মাজার পালা তাই হাতে নিতে হয় টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট। রান্নাঘরে গ্যাসের উননে ফুটছে জল ,ঘরে বসে আমরা পৃথিবীর সব খবরা খবর পাই ,বিজ্ঞানের প্রাসাদেই।বিজ্ঞানের অপরিসীম দানে পাওয়া গেছে টেলিভিশন, ফ্রিজ, ইস্ত্রী ,ইলেকট্রিক পাখা ,টেলিফোন প্রভৃতি।
কর্মজীবনে বিজ্ঞান :
স্নান, আহার সেরে আমরা বেরিয়ে পড়ি কর্মক্ষেত্রে। বিজ্ঞানের কল্যাণে হয়েছে দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি। সেই সৌভাগ্য যাদের নেই তাদের জন্য আছে ট্রেন-ট্রাম ,বাস প্রভৃতি। বহুতল বিশিষ্ট অফিসে ওঠানামার জন্যে বিজ্ঞান এনে দিয়েছে লিফট। বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত টাইপরাইটার, কম্পিউটার মানুষকে কর্ম জীবনে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান :
কৃষকের জীবনে বিজ্ঞান আজ যথাযোগ্য স্থান লাভ করেছে।ট্রাক্টর তেমন ভূমিকর্ষণে সুবিধা এনে দিয়েছে, তেমনি রাসায়নিক সার, উচ্চ ফলনশীল বীজ ,বিদ্যুৎচালিত পাম্প প্রভৃতি কৃষিক্ষেত্রে সুবিধা এনে দিয়েছে। যে নদী উপত্যকা দ্বারা বন্যার জল সেচ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তি বিদ্যা কে কাজে লাগিয়েই।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :
চিকিৎসাশাস্ত্রে বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম। শুধুমাত্র ঔষধ ও স্বাস্থ্য সেব্য বস্তুর আবিষ্কারই নয়,অস্ত্রোপচারের নানা যন্ত্র, স্ক্যানার, এক্সরে ইত্যাদি আবিষ্কার চিকিৎসা জগতে বিপ্লব এনে দিয়েছে।বিজ্ঞান রেডিয়াম, কোবাল্ট ,রশ্মি ক্যান্সার সারিয়ে মানুষকে দীর্ঘজীবী করেছে।
উপসংহার :
বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ এর জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয়-দায়ী স্বার্থান্বেষী মানুষ। বর্তমানে বিজ্ঞানের অপব্যবহার এর ফলে পৃথিবীর প্রতিটি মুহূর্ত কেঁপে উঠেছে। তাই মূল কথা হল বিজ্ঞানের কলা কৌশল আয়ত্ত করার চেয়ে আগে প্রয়োজন স্বচ্ছ বিজ্ঞানসম্মত জীবনবোধ ও মানবিকতার উন্মেষ ঘটানো।তাহলেই আমরা ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ চিন্তা প্রলোভন উত্তীর্ণ হয়ে কুসংস্কারকে ধিক্কার দিয়ে মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানকে আরো বেশি আমন্ত্রণ করতে পারব।
ছাত্রজীবন ও সৌজন্যবোধ
ভূমিকা :
অলংকার নারীর দেহের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। আর মানবিকতার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে শিষ্টাচার। শিষ্টাচার ও সৌজন্য মনুষ্যত্বের পরম সম্পদ। অলংকার হলো বাইরের বস্তু কিন্তু শিষ্টাচার মানুষের অন্তরের সামগ্রী আর সৌজন্যবোধ হলো তার মার্জিত রুচির প্রকাশ।এই গুণগত বৈশিষ্ট্যের জন্য মানুষ সবার কাছে প্রিয়, শ্রদ্ধেয় ও বরেণ্য হয়ে ওঠে।
সমাজজীবনে শিষ্টাচার :
সামাজিক অনুষ্ঠানে ভাতৃত্বের বন্ধন ও সৌষ্ঠব রক্ষার জন্য মানুষকে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো শিষ্টাচার।আত্মীয় -অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত সকলের সাথে শ্রদ্ধাপূর্ণ, প্রীতিপূর্ণ, রুচিসম্মত ব্যবহারই শিষ্টাচার। সৌজন্যবোধ কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাপার নয়,তার জীবনের সর্বক্ষণের চলাফেরা ও কথা বার্তার এক অপরিহার্য আদর্শ।
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার :
ছাত্র জীবনে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ প্রয়োজন। ছাত্রদের চরিত্র সুগঠিত হয় এ সময়েই। জেসিকা ছাত্রকে ভদ্র, বিনয়ী করে না, তা শিক্ষাই নয়। জীবন বিকাশের উন্মেষ পর্বই হলো ছাত্রজীবন। এ সময়ে ছাত্রদের শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধে এ শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি প্রদর্শন করতে হবে। এর মধ্য দিয়েই ছাত্ররা নিজেদের ভবিষ্যতকে সার্থক করে তোলার সুযোগ পাবে । বিনয়ী ও ভদ্র ছাত্ররা সব সময় শিক্ষকদের কাছ থেকে সর্বপ্রকার আশীর্বাদ লাভ করে থাকে। এর ফলে তারা অসত্য থেকে সত্যে, অন্ধকার থেকে আলোয় উপনীত হয়।
শিষ্টাচার ও সভ্যতা :
বর্তমানকালে দেশের সব জায়গায় নীতিহীনতা ও অরাজকতার এক বিশ্রী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ মানুষের প্রতি বিনয়-নম্র, ভদ্র আচরণ ও শোভন ব্যবহারের দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। গুরুজনদের প্রতি অনুজনদের ভক্তি ও শ্রদ্ধা নেই, শিক্ষকদের প্রতি অশোভন আচরণ করে।বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রেগিং এর নামে নবাগত ও নবাগতা দের প্রতি অশ্লীল ব্যবহার এবং কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা চলে। নারী নির্যাতন বর্তমানে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনার দৃষ্টান্ত ভারতীয় জীবন থেকে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ ধীরে ধীরে অন্তর্হিত হচ্ছে।
উপসংহার :
ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র মূলে ছিল শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ। এখানেই মানুষ পশুর থেকে পৃথক ও বৃহৎ এক সত্তার অধিকারী। বর্তমানে আমাদের জীবনে যতই সমস্যা ও সংকট থাকুক না কেন, আমাদের শুভ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। মনে রাখতে হবে উচ্ছৃংখলতা ও চরিত্রহীনতা ব্যক্তি, সমাজ তথা জাতির অধঃপতন ঘটে। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ মনুষ্যত্ব অর্জন এর চাবিকাঠি ও জাতীয় চরিত্রের উন্নতির সোপান।
**********************************************
(৩) বাংলার উৎসব
ভূমিকা :
মানবজীবনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হল উৎসব। আর আমাদের দেশ হল একটি উৎসবের দেশ। কথায় আছে,বারো মাসে তেরো পার্বণ। এক ঘেয়েমি জীবন কাটিয়ে বাংলার মানুষজন উৎসবে মেতে ওঠে। বাংলার এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালির ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ে পরিচয় পাওয়া যায়।বাংলার উৎসব গুলিকে মোটামুটিভাবে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়-- ধর্মীয় উৎসব, ঋতু উৎসব, সামাজিক উৎসব ও জাতীয় উৎসব।
ধর্মীয় উৎসব :
আমাদের দেশ হল বিভিন্ন ধর্মের মিলন ক্ষেত্র। এখানে নানা ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। সকল সম্প্রদায়ই ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠে।হিন্দু তথা বাঙ্গালীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হল দুর্গাপূজা । এছাড়া রথযাত্রা, লক্ষ্মী পূজা, কালী পূজা, সরস্বতী পূজা উৎসব গুলি বাংলায় পর্যায়ক্রমে পালিত হয়। মুসলমান সম্প্রদায়ের উৎস গুলির মধ্যে আছে মহরম, ঈদ, সবেবরাত প্রভৃতি। বাঙালি খ্রিস্টানদের মধ্যে আছে বড়দিন, গুডফ্রাইডে প্রভৃতি। এই সকল উৎসবগুলির মধ্যে সামাজিকতার থেকে বড় হয়ে দেখা দেয় ধর্মীয় অনুরাগ। তবে ধর্ম এখানে প্রধান উদ্দেশ্য হলেও উৎসব হিসাবে এগুলি উপেক্ষণীয় নয়।
ঋতু উৎসব :
বাংলার ছয়টি ঋতুতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। বাংলার ঋতু উৎসব গুলির মধ্যে প্রধান কয়েকটি উৎসব হলো-নবান্ন, মাঘোৎসব, দোলযাত্রা, নববর্ষ উৎসব প্রভৃতি। এগুলো ছাড়াও হিন্দুদের প্রধান ঋতু উৎসব হলো পৌষ পার্বণ। এই সকল উৎসব গুলি বাঙালি জীবনে নিয়ে আসে বৈচিত্রের আস্বাদ।
সামাজিক উৎসব :
মানুষ হচ্ছে সামাজিক জীব।তাই কোনো ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সেই উৎসবে জড়িয়ে নিতে চায় আর পাঁচজনকে। সেই সামাজিক বা পারিবারিক উৎসবগুলির মধ্যে জন্মদিন পালন,অন্নপ্রাশন, বিবাহ,ভাতৃদ্বিতীয়া প্রভৃতি।এইসমস্ত অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে এক গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তৈরী হয় এক সুদৃঢ় সামাজিক বন্ধন।
জাতীয় উৎসব :
ধর্মীয় উৎসব ঋতু উৎসব সামাজিক উৎসব ছাড়াও অন্য একটি উৎসব হলো জাতীয় উৎসব। 26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস,15ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস, 25 শে বৈশাখ রবীন্দ্র জয়ন্তী, 23শে জানুয়ারি প্রভৃতি দিনগুলি জাতীয় উৎসবের অন্তর্ভুক্ত।
উৎসবের আনন্দ :
বাংলার ঋতুপর্যায় উৎসবগুলি আমরা জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে মিলনের প্রীতি- শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে থাকি এবং ভাবের আদান-প্রদান করে থাকি।তাই বলা যায়,উৎসব হল বাংলার প্রাণ, বাংলার ঐতিহ্যকে এক গভীর সুসামঞ্জস্য মণ্ডিত করে তুলেছে।
উপসংহার:
উৎসবই হলো আনন্দের উৎস।তবে বাংলার এই উৎসব গুলিকে শুধুমাত্র সাময়িক আনন্দ ও উত্তেজনার উৎস বললে ভুল হবে। এই উৎসব একে অন্যের সহিত মিলিয়ে দেওয়ায়, মানুষ সংকীর্ণ গণ্ডিকে অতিক্রম করতে সফল হয়।সকলের সাথে মিলেমিশে, সবার রঙে রঙ রাঙিয়ে, নিজেকে সুন্দর করে তুলতে পারলেই, তবেই হবে উৎসবের সার্থকতা।
**************************************************************************************************
(৪) শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা
ভূমিকা :
মানব জীবনে শিক্ষার উপযোগিতা সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন-"education is fulfillment of divinity already in man."অর্থাৎ মানুষের অন্তরে দেবত্বের উদ্বোধনই হলো শিক্ষার লক্ষ্য। পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব বিকাশই প্রাচীন ভারতের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল।ছায়ানিবিড় গ্রামপ্রধান প্রাচীন ভারতের জনশিক্ষা একদিকে ছিল যেমন ব্যাপক অন্যদিকে তেমনি ছিল জীবন চর্চার প্রথম পদক্ষেপ।যাত্রা গান কথকতা মঙ্গল গান বাউল গান কীর্তন গান প্রভৃতির মধ্য দিয়ে আনন্দ ও শিক্ষা দুইই সমাজে পরিব্যাপ্ত হয়েছে।
শিক্ষা ও গণমাধ্যম :
প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যগত শিক্ষা ছিল তপবন আশ্রম এর গুরুকুল শিক্ষা।কিন্তু ইংরেজ আমলে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ভারতের নিজস্ব শিক্ষাদর্শ ক্রমশ গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রধানত বৃত্তিমুখী এবং তা বিদ্যা আয়তনের চার দেওয়ালের মধ্যে শিক্ষা দেয়া হয়।বর্তমানে আমাদের দেশে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন প্রভৃতি আধুনিক মাধ্যমগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
সংবাদপত্রের ভূমিকা :
সংবাদপত্র বর্তমান পৃথিবীর বার্তাদূত। তাই শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। অতি সাধারণ শিক্ষিত জনগণের পক্ষে সংবাদপত্রই বিবিধ বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার সহজতম উপায়। সংবাদপত্র প্রতিদিনের পৃথিবীর জ্ঞাতব্য ঘটনাগুলি সংকলন করে অর্ধ শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের সামনে হাজির করে।সংবাদপত্র থেকে সাধারণ মানুষ জাতীয় অর্থনীতি, রাজনীতি, খেলাধুলা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বর্তমান যুগ গণতন্ত্রের যুগ।এযুগে জনমত প্রকাশ ও গঠনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো সংবাদপত্র।
দূরদর্শনের ভূমিকা :
দূরদর্শন হল অপর একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। দূরদর্শন এর সুবিধা হল যে, ঘরে বসেই শিক্ষা ও প্রমোদ গ্রহণ করা যায়।সংবাদপত্রের শিক্ষা সব সময় নিরক্ষর মানুষদের কাছে বোধগম্য হয় না। কিন্তু দূরদর্শনের চলমান চিত্র ও ধনের একসঙ্গে মিলনের ফলে সকল শ্রেণীর দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য।দূরদর্শন তার প্রচার এর দ্বারা কৃষি-শিল্প, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে সকল শ্রেণীর দর্শককে সবরকম শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারে।
বেতারের ভূমিকা :
শিক্ষা বিস্তারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো বেতার বা রেডিও।এর সাহায্যে অনুষ্ঠিত শিক্ষার আসর, জীবিকা সমাচার, পল্লী সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে মানুষ জ্ঞান লাভ করতে পারে।তবে লক্ষ্য রাখতে হবে রেডিওতে প্রচারিত অনুষ্ঠান গুলি আলোচনা মাত্র না হয়ে শ্রোতার হৃদয়গ্রাহী যেন হয়।
চলচ্চিত্রের ভূমিকা :
শিক্ষা বিস্তারে তো বটেই সমাজ জীবনের নানা ক্ষেত্রে ও চলচ্চিত্রের ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। চলচ্চিত্রকে বাস্তব ও কল্পনার সংমিশ্রণে তৈরি ঘটনাকে চলমান দৃশ্য রূপে দর্শক শ্রোতার সামনে হাজির করে।বিশ্বের ভূগোল, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সমাহারে একটি চলচ্চিত্র যে ভূমিকা পালন করে, অজস্র গ্রন্থপাঠেও সম্ভব হয় না। এই চলচ্চিত্রের সাহায্যে সহজেই জনমত গঠিত হতে পারে। তাই চলচ্চিত্রে ন্যায় বহুল প্রচারিত এই গণমাধ্যমের প্রভাব জনগণের উপর সবচেয়ে বেশি।
উপসংহার :
বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে নতুন নতুন গণমাধ্যম আবিষ্কৃত হওয়ায় শিক্ষা বিস্তারের বহুপথ উন্মোচিত হয়েছে।যুগের প্রয়োজনে গণমাধ্যমগুলো গেছে বদলে কিন্তু এ ক্ষেত্রে সচেতন থাকা প্রয়োজন এই গণমাধ্যমগুলো যেন গোষ্ঠী স্বার্থের প্রয়োজনে প্রকাশিত না হয়।মুনাফালোভী, ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক সংস্থার প্রলোভন এড়াতে না পারলে গণমাধ্যমগুলো সমাজের কল্যাণ সাধন করবে। তাই সংবাদপত্রকে হতে হবে দলধর্ম ও সাম্প্রদায়িক নিরপেক্ষ।
*************************************************
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.