মধ্যযুগের বাংলার স্থাপত্যরীতির মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল ?

 মধ্যযুগের বাংলার স্থাপত্যরীতির মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল ?


উত্তর। মধ্যযুগের বাংলা ছিল স্থাপত্য শিল্পের অগ্রগতির যুগ। এই সময় বাংলার স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসকে তিনটি মূল পর্যায়ে ভাগ করা যায়।

 প্রথম পর্যায়ঃ 

                 এই সময় বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। এই পর্যায়ে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ স্থাপত্যগুলি প্রাকৃতিক কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। একমাত্র ত্রিবেণীতে জাফর খানের সমাধির ভগ্নাবশেষ এবং বসিরহাটে ছড়িয়ে থাকা কিছু স্তূপের নিদর্শন মেলে। 

দ্বিতীয় পর্যায়ঃ

            এটি  বাংলার স্থাপত্যের উজ্জ্বল যুগ। এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য হল মালদহের পান্ডুয়ায় সিকান্দর শাহের বানানো আদিনা মসজিদ। এছাড়া হুগলির ছোট-পাণ্ডুয়ার মিনার ও মসজিদ এবং গৌড়ের শেখ আকি সিরাজের সমাধি। 

তৃতীয় পর্যায়ঃ  

             বাংলায় ইন্দো-ইসলামি রীতির স্থাপত্য শিল্পের উন্নতির যুগ। এই সময় পান্ডুয়ায় সুলতান জালাল উদ্দিন মহম্মদ শাহের একলাখি সমাধি বিখ্যাত। বরবক শাহের আমলে তৈরি হয় গৌড়ের দাখিল দরওয়াজা, বড়ো সোনা মসজিদ ফিরোজ মিনার তৈরি হয়।

              বাংলাদেশে মুসলমান শাসনের সূচনা পর্বে ইসলামীয় রীতির সঙ্গে লৌকিক রীতির সংমিশ্রণে স্থাপত্য শিল্প গড়ে উঠতে দেখা যায়। বাড়ি ও বেশিরভাগ মন্দির ঢালু ধাঁচে তৈরি করা হত। এই নির্মাণ পদ্ধতিই 'বাংলা' নামে পরিচিত। পুরানো অনেক মন্দিরের কাঠামো এই ধাঁচেই নির্মিত হত। এমনই দুটি কাঠামো পাশাপাশি নির্মিত হলে তাকে “জোড়-বাংলা” বলা হত। চাল বা চালাভিত্তিক মন্দির বানানোর রীতিও বাংলায় দেখা যায়। মন্দিরের মাথায় কটি চালা আছে, সে হিসাবেই মন্দিরগুলি এক চালা, কখনো দো-চালা, কখনো আটচালা হত। যেমন—বাঁকুড়ার রাসমত্রুটি ছিল— চার চালা। ইসলামীয় স্থাপত্য রীতির ধাঁচে চালাগুলির মাথায় মাঝে মধ্যেই খিলান, গম্বুজ বানানো হত। সাধারণ আয়তাকার কাঠামোর উপর একাধিক চূড়া দিয়ে মন্দির নির্মাণ করার রীতিও এই সময়কালে বাংলায় ছিল। এই বিশেষ স্থাপত্য 'রীতির নাম 'রত্ন'। 



(ছ) মুঘল চিত্রশিল্পের উন্নতিতে মুঘল বাদশাহদের কী ভূমিকা ছিল?


উত্তর। ভারতীয় চিত্রশিল্পে মুঘল শাসকরা এক গুরুত্বপূর্ণ নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। মুঘলরা পারসিক ও ভারতীয় চিত্ররসের সমন্বয়ে স্থাপত্যের মতোই এক স্বতন্ত্র চিত্রশিল্পের বিকাশসাধন করেন। মুঘল চিত্রশিল্পের উন্নতিতে প্রত্যেক মুঘল। বাদশাহের ভূমিকাই অনস্বীকার্য।


বাবর ও হুমায়ুন দুজনেই রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতির জন্য চিত্রকলা শিল্পে তেমন অবদান না রেখে যেতে পারলেও, বাবর যে সৌন্দর্য ও প্রকৃতির প্রেমিক ছিলেন তা তাঁর আত্মজীবনী 'বাবরনামা'তে, উল্লিখিত আছে। হুমায়ুন পারস্যে অবস্থান। কালেই মুঘল চিত্রশিল্পে পারসিক প্রভাবের ভিত নির্মাণ করে যান, যা ভারতবর্ষে মুঘল চিত্রশিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা করে। হুমায়ুন প্রথম পারস্যের দুই শিল্পী সৈয়দ আলি ও আবদুস সামাদকে কাবুলে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন। 'ইমজানামা' বই এর অলংকরণের কাজ হুমায়ুনের সময়ই শুরু হয়।


প্রকৃতপক্ষে আকবরের রাজত্বকালেই মুঘল চিত্রকলার যাত্রা শুরু হয়েছিল। জাহাঙ্গিরের আমলে তা বিকশিত হতে থাকে এবং সপ্তদশ শতকে বিকাশের সর্বোচ্চ শিখরের আরোহণ করে। এই সময়ে নিজস্ব চিত্রকরদের দিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতিকৃতি তিনি আঁকিয়েছিলেন। তাঁর দরবারে চিত্রকরদের মধ্যে বসাওয়ান ছিলেন প্রতিকৃতি অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত। 'আকবর নামা' গ্রন্থের চিত্রায়ণে যে সুন্দরতম কিছু চিত্রের নিদর্শন পাওয়া যায়, তা বিশেষ এক বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। 'তুতিনামা', “রাজমনামা” (মহাভারতের ফারসি অনুবাদ) প্রভৃতি বইগুলি সুন্দর চিত্রকলা দিয়ে সাজানো ছিল।


Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)